ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির জ্যেষ্ঠ দুই নেতা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্যের ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশগুলোসহ এখন পর্যন্ত বিশ্বের অন্তত ১৫টি দেশ বিজেপি সরকারের নিন্দা জানানোর পাশাপাশি দেশটিকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
মঙ্গলবার (৭ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সাবেক মুখপাত্র নুপুর শর্মা এক টেলিভিশন শোতে অংশ নিয়ে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন। পরে দলটির নয়াদিল্লি শাখার গণমাধ্যম প্রধান নবীন জিন্দালও নুপুর শর্মার মন্তব্যের সমর্থনে টুইট করেন।
তাদের এই মন্তব্য দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়কে ক্ষুব্ধ করে তোলে। নবীকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যের জেরে ভারতের কয়েকটি রাজ্যের মুসলিমরা বিক্ষিপ্তভাবে প্রতিবাদ বিক্ষোভও করেন। এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী মুসলিম দেশগুলোও এর প্রতিবাদ জানায়।
এরপরই অনেকটা নড়েচড়ে বসে বিজেপি। পরিস্থিতি বিবেচনায় বিজেপি অভিযুক্ত নুপুর শর্মাকে বরখাস্ত এবং জিন্দালকে বহিষ্কার করে। পরে বিজেপির এই দুই নেতা প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে বিবৃতিও দিয়েছেন।
মঙ্গলবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে এনডিটিভি বলছে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে বিজেপি নেতা নুপুর শর্মা এবং নবীন কুমার জিন্দালের কটূক্তির জেরে কূটনৈতিক ক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। যদিও ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার বিভিন্ন দেশে এসব ক্ষোভ প্রশমিত করার চেষ্টা করেই চলেছে। নয়াদিল্লির দাবি, ভারত ও ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার সকল ধর্মকেই সম্মান করে।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য ঘিরে ইরান, ইরাক, কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান, আফগানিস্তান, বাহরাইন, মালদ্বীপ, লিবিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া সহ অন্তত ১৫টি দেশ ভারতের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছে।
একইসঙ্গে এই দেশগুলো নিন্দা জানানোর পাশাপাশি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর অপমান প্রত্যাখ্যান করেছে এবং ভারত সরকারকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছে।
অন্যদিকে, দেশের ভেতরেও বিরোধী দলগুলোর তীব্র চাপের মুখে পড়েছে ভারতের বিজেপি সরকার। দেশটির বিরোধী দলগুলো বিজেপির অভিযুক্ত দুই নেতার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চাপ আরও বাড়ানোর পাশাপাশি কট্টর হিন্দুত্ববাদী এই দলটিকে আন্তর্জাতিক স্তরে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে।
এদিকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আক্রমণাত্মক কোনো টুইট ও মন্তব্য ‘কোনোভাবেই বিজেপি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন নয়। এগুলো ব্যক্তিগত বা প্রান্তিক উপাদানের মতামত’।
অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) বিজেপির ওই দুই নেতার মন্তব্যের নিন্দা করেছে এবং ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিমদের অধিকার সুরক্ষিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য ভারতকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে বলে জানিয়েছে কাতার। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘এই ধরনের ‘ইসলামভীতিপূর্ণ’ মন্তব্যের বিরুদ্ধে যদি শাস্তিমূলক পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে তা মানবাধিকার রক্ষায় গুরুতর বিপদ তৈরি এবং অত্যধিক কুসংস্কার ও প্রান্তিকতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। যা সহিংসতা ও ঘৃণার চক্র তৈরি করবে’।
সৌদি আরবও বিবৃতিতে কিছু কড়া শব্দ ব্যবহার করেছে। দেশটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বিজেপি মুখপাত্রের বক্তব্যে নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়’।
নয়াদিল্লির কাতার দূতাবাসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, নরেন্দ্র মোদির সরকারকে প্রকাশ্যে মন্তব্য করা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে। বার্তাসংস্থা রয়টার্স ওই কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ‘আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে যেকোনো আঘাত সরাসরি অর্থনৈতিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে’।
সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) বিজেপির মুখপাত্রের বক্তব্যের নিন্দা করে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর অবমাননা প্রত্যাখ্যান করেছে। একইসঙ্গে ধর্মীয় প্রতীকগুলোকে সম্মান করার এবং তাদের লঙ্ঘন না করার পাশাপাশি ঘৃণামূলক বক্তব্য ও সহিংসতার মোকাবিলা করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে দেশটি।